টিন সার্টিফিকেট কি, কি কাজে লাগে, এর সুবিধা ও অসুবিধা

5/5 - (1 vote)

বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিককে তার উপার্জিত আয় এর উপর ভিত্তি করে সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করতে হয়। এর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড টিন সার্টিফিকেট রেজিটেশন করার মাধ্যমে কর প্রদান করা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

আজকের এই আর্টিকেলটি শেষ পযর্ন্ত পড়ার মাধ্যমে আপনি ই-টিন সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারবেন।

টিন সার্টিফিকেট কি? (What is TIN Certificate?)

টিন সার্টিফিকেট এর পূর্ণরূপ হলো ট্যাক্সপেয়ার আইডেনটিফিকেশন নাম্বার (Taxpayer Identification Numbers)যাকে আমরা সংক্ষেপে “TIN” বলি।

বর্তমান সময়ে ব্যক্তিগত তথ্য বা ব্যবসায়িক তথ্য দ্বারা অনলাইনের মাধমে এপ্লাই করার পর যে সার্টিফিকেট পাওয়া যায় তাকে ই-টিন (E-TIN) -ও বলা হয়।

মূলত এই নাম্বারটি ১২ সংখ্যার নাম্বার হয়ে থাকে এবং এটি এমন একটি নাম্বার যার মাধ্যমে বাংলাদেশের কর দাতাদের শনাক্ত করা হয়।

এছাড়াও জানুন: ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কিভাবে শুরু করবেন?

আপনি বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে কোনো ব্যবস্যা-প্রতিষ্ঠান বৈধ উপায়ে শুরু করতে চান যেমনটা ট্রেড লাইসেন্স এর প্রয়োজন পরে তেমনি আপনার আয়ের উপর যে একটি সরকারি ট্যাক্স বা আয়কর প্রদানের জন্য টিন সার্টিফিকেট থাকাটা বাধ্যতামূলক।

টিন সার্টিফিকেট কি কাজে লাগে?

আপনার উপার্জন যদি আয়কর সীমার উর্ধ্বে হয় সেক্ষেত্রে আপনাকে আপনার অর্জিত আয়ের ইনকাম ট্যাক্স দিতে হবে। এর আগে আপনাকে অবশ্যই TIN Certificate তৈরি করে নিতে হবে।

এছাড়াও কি কি ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হতে পারে তা নিচে দেওয়া হলো:

  • আপনি যদি নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স করাতে চান বা নবায়ন করতে চান।
  • কোনো ব্যাংক এর মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড পেতে চাইলে।
  • কোনো ব্যবসার শেয়ার কিনতে চাইলে।
  • ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য।
  • সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত থাকা কোনো এলাকায় জমি,বাসা-বাড়ি বা ফ্ল্যাটের রেজিষ্ট্রেশন করানোর জন্য।
  • ব্যক্তিগত কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করতে চাইলে।
  • সরকারি ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে চাইলে।

টিন সার্টিফিকেট করার নিয়ম

বর্তমান সময়ে সব কিছু ডিজিটালাইজ হয়ে যাচ্ছে যাচ্ছে তাই একজন করদাতাকে কোনো প্রকারের ঝামেলা ছাড়াই যেনো আয়কর প্রদান করতে পারে এর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অনলাইনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু করেছে।

এছাড়াও জানুন: সেল ও মার্কেটিং কি? নিয়ে জটিল সব প্রশ্নের জবাব

আপনি যদি TIN Certificate তৈরি করার কথা ভেবে থাকেন বা করতে চান করার এর জন্য বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট “nbr.gov.bd” থেকে eServices মেনু থেকে Income Tax এর সাবমেনু থেকে e-TIN এ ক্লিক করার মাধ্যমে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন কার্য সম্পূর্ণ করতে হবে।

টিন সার্টিফিকেট এর সুবিধা ও অসুবিধা

TIN Certificate এর অসুবিধার থেকে সুবিধা অনেকাংশে বেশি। এর দ্বারা আপনি অনেক ধরনের সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। নিম্নে এর সুবিধা ও অসুবিধা তুলে ধরা হলো-

টিন সার্টিফিকেট থাকার সুবিধা

টিন সার্টিফিকেট থাকার দরুন আপনি একজন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ট্যাক্স প্রদানকারী সদস্য হওয়ার মাধ্যমে আপনার বাৎসরিক আয়ের আয়কর সিমা মোতাবেক ট্যাক্স প্রদান করার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন। এছাড়াও আরো অন্যান্য যে সুবিধা গুলো পেতে পারেন তাহলো-

  • আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় কর ছাড় বা কর মওকুফ এর সুবিধা পেতে পারেন।
  • বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহনের ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে।
  • সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন কোনো জমি বা ফ্লাট কেনা-কাটা ইত্যাদির ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে যা উপরে বলা হয়েছিল।
  • অনলাইনে অনেক জায়গাতে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য টিন নাম্বার প্রয়োজন হয়, এক্ষেত্রে আপনার কাজে হেল্প করবে
  • টিন সার্টিফিকেট থাকলে আপনার ব্যাংকের সঞ্চয়কৃত মুনাফা থেকে ১০% কর্তন করা হয় আর না থাকলে ১৫% কর্তন করা হয়।

টিন সার্টিফিকেট থাকার অসুবিধা

প্রত্যেকটি জিনিসের যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি অসুবিধাও রয়েছে। প্রধান অসুবিধাটি হলো TIN Certificate থাকলে প্রতি বছর জুলাই থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট সময়ে বাধ্যতামূল রিটার্ন জমা দিতে হবে।

এছাড়াও জানুন: আপনি কেন এই জব টি করতে চান? এই প্রশ্নের উত্তর যেভাবে দিবেন

এরপর যে অসুবিধাটি তা হলো আপনি চাইলেই কিন্তু তা বাতিল করতে পারবেন না। আপনি যদি বেকার হোন বা আয়কর সীমার আওতাধীন না হন তাহলে পরপর তিন বছর জিরো রিটার্ড জমা দেয়ার পর বাতিলের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

এরপর যে অসুবিধা তা হলো টিন সার্টিফিকেট থাকা অবস্থায় আপনি যদি রিটার্ন জমা না দেন এক্ষেত্রে জেল-জরিমানা হবারও সম্ভাবনা রয়েছে। আয়কর রিটার্ন এর যে আইন-কানুন আছে সে আইন অনুযায়ী ই-টিন থাকলে আপনাকে রিটার্ন জমা দিতে হবে।

উপসংহার

বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আপনার উপার্জিত আয়ের উপর আয়কর ট্যাক্স জমা দেওয়া একজন নাগরিক হিসেবে আপনার কর্তব্য। আপনার আয়ের উপর যদি ট্যাক্স জমা না দেওয়া এটা একটি গুরত্বর অপরাধ হিসাবে গ্রহন করা হয়। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদেরকে আমাদের উপার্জিত আয়ের যে ইনকাম ট্যাক্স তা সরকারকে প্রদান করা একজন নাগরিক হিসেবে সকলের দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য।

Leave a Comment