ডিজিটাল মার্কেটিং কি? সম্পর্কিত একটি কমপ্লিট গাইডলাইন

5/5 - (2 votes)

ডিজিটাল মার্কেটিং কি? এই সম্পর্কে সবার জানার চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কারণ সবকিছু এখন ডিজিটালাইজড হয়ে যাচ্ছে।

আগে যেমন কোন প্রচারণার জন্য মাইকিং করা হতো অথবা কোন নিউজ পেপারে বিজ্ঞাপন দেয়া হতো কিন্তু এখন দিন যতোই যাচ্ছে ততােই সবকিছু অনলাইন ভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। মানুষ অনলাইনের দিকে ঝুকে পরছে। দিন দিন ডিজিটাল মার্কেটারদের চাহিদাও বেড়েই চলছে।

আপনি যদি একজন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হন অথবা আপনার একটি ছোট ব্যবসা আছে অথবা আপনি একজন ইমপ্লয়ার অথবা আপনি একজন স্টুডেন্ট হন আর যাই হন না কেন এই যুগে এসে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং ফান্ডামেন্টাল সম্পর্কে একটি এভারেজ নলেজ পেতে যাচ্ছেন। এরজন্য পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। পুরো আর্টিকেলটি পড়ার ধৈর্য না থাকলে এখান থেকেই বের হয়ে যেতে পারেন। তার কারন, ধৈর্য এবং প্রচেষ্টা মানুষকে অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

ডিজিটাল মার্কেটিং কি?

ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে বুঝায় আপনার পণ্য অথবা সার্ভিসকে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে শুরু করে অনলাইন ভিত্তিক যেসব জায়গায় মানুষের সমাগম বেশি সে জায়গায় আপনার পণ্যকে প্রচারণা করা অথবা বিজ্ঞাপন দেওয়ার মাধ্যমই হলো ডিজিটাল মার্কেটিং।

ডিজিটাল মার্কেটিং একটি বিশাল বড় সেক্টর। এখানে অনেক ছোট-বড় ক্যাটাগরি রয়েছে।

আপনি যদি একজন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হন অথবা আপনার একটি ছোট লোকাল ব্যবসা আছে তাহলে আপনার উচিত হবে একজন Digital Marketer কে নিয়োগ না করে আপনার ব্যবসার চাহিদা অনুযায়ী স্পেসিফিক ক্যাটাগরির উপর এক্সপার্ট এমন কাউকে চাকরির নিয়োগ করা। কারণ একজন মানুষের পক্ষে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মত এতোবড় বিশাল সেক্টরে এক্সপার্ট হওয়া সম্ভব নয় ।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনিয়তা

ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলতে গেলে এর চাহিদা আকাশ ছোঁয়া। দিনে দিনে ডিজিটাল মার্কেটারদের চাহিদা বেড়েই চলেছে। কারণ সবাই তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও নিয়ে আসতেছে।

ধরুন একজন ইলেকট্রিশিয়ান ব্যক্তি সে ধানমন্ডির সকল বাসা-বাড়ি, দোকান-পাট ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান এর জন্য ইলেকট্রনিক্স সার্ভিস প্রধান করে থাকেন। এছাড়াও সে ব্যক্তির ধানমন্ডিতে একটি দোকান আছে যেখানে ইলেকট্রনিক সকল প্রকার যন্ত্রাংশ বিক্রি করে থাকেন। তাহলে সে ব্যক্তির জন্য উচিত হবে একজন Local SEO Expert কে নিয়োগ করা। এতে করে যখন কেউ গুগলে “Electrician expert in dhanmondi” লেখে সার্চ করবে তখন তার ওয়েবসাইটকে প্রথমে দেখাবে। এর দ্বারা কাস্টমারদের থেকে ফোন কল অথবা Email এর মাধ্যমে কাজ পেতে পারে। এবং ধানমন্ডি এরিয়াতে তার দোকানের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য ফেসবুকে বিজ্ঞাপন অর্থাৎ অ্যাড দেয়া যেতে পারে এতে করে মানুষ তার দোকান সম্পর্কে জানতে পারবে এবং এতে করে তার দোকানের বিক্রয় আরো বেড়ে যাবে। এর জন্য তাকে একজন ফেসবুক এক্সপার্ট নিয়োগ করা উচিত।

আর একটি ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ডিজিটাল মার্কেটারদের চাহিদা সম্পর্কে উদাহরণ দিচ্ছি তাহলে বিষয়টি আরো ক্লিয়ার হবে। ধরুন গুলশানে একটি ফাস্টফুড রেস্টুরেন্ট আছে। ধরুন তারা এই মুহূর্তে একটি খাবারের জন্য ডিসকাউন্ট অথবা স্পেশাল অফার দিচ্ছে। নরমালি এই অফারটা যতটা না সেল হবে এর থেকেও বেশি সেল জেনারেট করবে যদি এই অফারটা ফেসবুক এক্সপার্ট দ্বারা ফেসবুকের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়।

এছড়াও ফ্রেশ, আরএফএল ও ওয়াল্টন এর মত বড় বড় কোম্পানি গুলোতেও ডিজিটাল মার্কেটারদের মোটামুটি চাহিদা রয়েছে। তারা তাদের বিজ্ঞাপন এক মাস বন্ধ রাখুক তাদের অটোমেটিক সেল জেনারেট কমে যাবে।

বুঝতেই পারছেন ডিজিটাল মার্কেটিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এর গুরুত্ব এবং চাহিদা সম্পর্কে বলতে গেলে হয়তো কখনো শেষ হবে না।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ কি?

আপনি যদি একজন ডিজিটাল মার্কেটার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার কাজ হবে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকের জন্য তার প্রোডাক্ট বা পণ্যকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন কলাকৌশল দ্বারা অনলাইনের মাধ্যমে রেভিনিউ জেনারেট করা।

এই সেক্টরে আপনি যত বেশি এক্সপার্ট হবেন ততো বেশি রেভিনিউ জেনারেট করতে পারবেন।

ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কি?

ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রকারভেদ এবং বিভিন্ন সেক্টর গুলোর মধ্য থেকে অন্যতম সেক্টর গুলো নিচে দেয়া হলো:

  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
  • ফেসবুক মার্কেটিং
  • গুগল এডস
  • সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO)
  • ইমেইল মার্কেটিং
  • ভিডিও মার্কেটিং
  • এফিলেট মার্কেটিং
  • ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং
  • কন্টেন মার্কেটিং

এছাড়াও ডিজিটাল মার্কেটিং এর আরো অনেক সেক্টর রয়েছে। ডিজিটাল মার্কেটিং একটি সমুদ্র। এর গভীরতা অনেক বিশাল।

ডিজিটাল মার্কেটিং করতে কি কি লাগে?

একটি কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ এবং সাথে ইন্টারনেট কানেকশন থাকতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় খুব বেশি হাই লেভেলের কনফিগারেশন ওয়ালা কম্পিউটার বা লেপটপ না হলেও চলবে। সবথেকে যে জিনিসটা খুব বেশি ইম্পর্টেন্ট তা হলো আপনার কোন কিছু শেখার মন মানসিকতা ও ধৈর্য ।

আপনার যদি কোন কিছু শেখার মন মানসিকতা ও ধৈর্য না থাকে তাহলে আপনি ভালো কিছু করতে পারবেন না।

মোবাইল দিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন মোবাইল দিয়ে কি ডিজিটাল মার্কেটিং করা সম্ভব কিনা?

এর উত্তরে বলব না।

মোবাইল দ্বারা ব্লগ পোস্ট পড়ে অথবা ইউটিউবে ভিডিও দেখার মাধ্যমে আপনি আপনার ফান্ডামেন্টাল ক্লিয়ার করতে পারেন কিন্তু কাজ করতে পারবেন না। কাজ করার জন্য অবশ্যই ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটারের প্রয়োজন হবে।

ক্যারিয়ার হিসেবে কেমন হবে?

ক্যারিয়ার হিসেবে খুবই ভালো। আপনি যদি কোন কোম্পানিকে বলেন যে আমাকে আপনার বেতন দিতে হবে না আমি আপনাকে সেল জেনারেট করে দিব আপনার প্রতিটা সেল থাকে আমাকে ১০ থেকে ২০% কমিশন দিবেন। যারা ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব বুঝে আমার মনে হয় না কোন কোম্পানি না বললে।

বাইরের দেশগুলোর পাশাপাশি এখন বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটারদের ডিমান্ড বেড়েই চেলেছে। এর কারণ সম্পর্কে ইতিমধ্যে আপনি একটি ধারনা পেয়ে গেছেন।

ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই এর বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে রিসার্চ করতে হবে। যে সেক্টরটি আপনার সঙ্গে ম্যাচ খায় অর্থাৎ যে সেক্টরটি মনে হবে আপনার জন্য পারফেক্ট সেটির উপর এক্সপার্ট হওয়ার চেষ্টা করবেন এবং বাকি সেক্টর গুলোর উপর অ্যাভারেজ নলেজ রাখবেন।

ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্টদের বেতন কত?

বেতন সম্পর্কে জানতে হলে গুগলে যেয়ে সার্চ করুন “digital marketing expert salary in bangladesh” লিখে। বাংলাদেশ এর জায়গায় বিভিন্ন দেশের নাম দিয়ে সার্চ করে দেখতে পারেন কোন দেশে কি রকম বেতন দেয়া হয় মার্কেটারদের।

ডিজিটাল মার্কেটিং কি নিজে নিজে শিখবো নাকি অনলাইনে কোর্স করব?

আপনাকে আগে জানতে হবে ডিজিটাল মার্কেটিং কি খায় নাকি মাথায় দেয়। তারপর ইউটিউবের মাধ্যমে বেসিকটা শিখে নেয়া যেতে পারে। এরপর আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন অনলাইনে কোর্স করা উচিত কিনা।

নতুন অবস্থায় কোর্স করতে গেলে যে সমস্যাটা হবে সেটা হলো- হয়তো দেখা যাবে আপনি শিখতে চাচ্ছেন একটা আর কোর্স এ শেখানো হচ্ছে অন্যটা। এক্ষেত্রে পুরো টাকায় জলে যাবে।

ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে কি কি করা সম্ভব?

ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার মাধ্যমে আপনি অনেক কিছুই করতে পারবেন। এর মাধ্যমে অনেকভাবে ইনকাম করতে পারবেন সে সম্পর্কে নিচে বলা হলো:

  1. ব্লগিং করে এডসেন্সের মাধ্যমে উপার্জন করা যেতে পারে।
  2. এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে এফিলিয়েট কমিশন দ্বারা উপার্জন করা যেতে পারে।
  3. এফ কমার্স বিজনেস (facebook business) করার মাধ্যমে উপার্জন করা যেতে পারে।
  4. ফ্রিল্যান্সিং করার মাধ্যমে উপার্জন করা যেতে পারে।
  5. ইউটিউবিং করার মাধ্যমে উপার্জন করা যেতে পারে।

এছাড়া আরো অনেক উপায় আছে যার মাধ্যমে আপনি চাকরি করা ব্যতীত উপার্জন করতে পারেন অনলাইন থেকে।

শেষকথা

আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনার যদি ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে বুঝতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন এবং তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দেবেন।

Leave a Comment